আমি তো আজ বেলফুলের মালা গাঁথি,
সেই মালায় সাজাই বেণী,
সেই সুবাসে করি নিজেকে উজাড়;
কখনও বা একমুঠো রঙ্গনফুল তুলে আনি
ছড়িয়ে দিই বিছানায়
একমুঠো শিউলি পেলে রেখে দিই বাটিতে
সুগন্ধে ভরে ওঠে জীবন;
আজও খোঁপা সাজাই স্বর্ণচাঁপায়, কখনও বা সূর্যমুখী,
আসবে না জানি…তবু,
তোমার চোখে নিজেকে দেখতে ভাল লাগে, খুউউব…
দোরের মুখে করতে বসি গাঁদার রঙ্গোলি,
কোনও অতিথি আসবে না জানি,
তবু কেউ আসবে ভাবতে ভালবাসি,
আসলে এসব কিছু করে নিজেকে খুঁজে পাই।
হয়তো ছিঁড়ে ফেলব বলেই লিখে ফেলি তোমাকে চিঠি,
সেই চিঠির প্রতি ছত্রে লিখি তোমার নাম,
হয়তো বা বৈষ্ণব পদাবলীর উপমা…
কেউ পড়বে না জানি, তবুও লিখতে ইচ্ছে হয় খুব,
কৈশোরপ্রেমের কথা,
উল্কাবৃষ্টির কথা,
আমার প্রথম সোনারদুল হারানো,
ঠাকুরমার দেওয়া কানবালা,
পুরীর মন্দিরের লাস্যময়ী পূজারিণী,
বিষ্ণুর দশাবতারের কথা,
অস্সিঘাটের উদাসী বাউলের কথা,
বাড়ির পুরনো তানপুরার কথা,
কোনএক সুপুরুষ শিবভক্তের কথা…
আমার বলতেও ইচ্ছে করে খুব,
যদিও শোনার কেউ নেই,
তবু দেয়ালেরও কান আছে,
এই প্রবাদ মেনে নিয়ে,
ইচ্ছে হয় বলে চলি অনর্গল
আমার প্রথম সর্ষে ইলিশ রাঁধা,
মায়ের বানানো চিতলের মুইঠ্যা,
আমার প্রথম কাজল পরা,
কোনএক সাদা পাঞ্জাবির জন্য অপেক্ষা
তার জন্য কবিতা দেখা,
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা “ভারততীর্থ”
প্রতিমার থেকেও মণ্ডপসজ্জা দেখে বেশি উৎফুল্ল হওয়া
দোলের দিনের উদ্দাম নৃত্য…
আমার দেখাতেও ইচ্ছে করে খুউউব,
আমি যা দেখি তাই,
যা দেখে আমি উদ্বেলিত হয়ে উঠি,
বাবুঘাটের সূর্যাস্ত,
পরেশনাথ মন্দিরের কারুকার্য,
ভিক্টরিয়ার উদাসীন পরী,
শোভাবাজার রাজবাড়ি…
ইমামবাড়ার সূর্যঘড়ি
ইচ্ছেকরেই নেড়েচেড়ে দেখি,
আমার বানানো গালিচা,
দেওয়ালে ঝোলানো ছবি,
নখের নকশায় আঁকা আজটেক চিত্রকলা
তবুও দিনের শেষে একাকী থেকে যাই,
আর কিছু হই বা না হই, নিজকাব্যের নায়িকা হই !!